এবিএনএ : টিউবারকিউলোসিস (টিবি) বা যক্ষ্মা একটি সংক্রামক রোগ। মানুষের ফুসফুসে এই রোগে সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তবে এই ব্যাধি ছড়ানোর জন্য ধুলিমাখা হাত, বাসন কিংবা খাবার দায়ী নয়। তাহলে দায়ী কোন মাধ্যম? রোগটি কি তাহলে চুম্বন কিংবা যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়? এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই রোগের জীবাণুগুলো বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় এবং তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে থাকে।টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা দুই ধরণের যক্ষ্মার কথা বলেছেন। তারা বলেছেন, যক্ষ্মার মধ্যে একটি হলো নিষ্ক্রিয় এবং অন্যটি হলো সক্রিয়। এর মধ্যে নিষ্ক্রিয় যক্ষ্মার জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে সেটিকে আপনার শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। ফলে ব্যক্তি সংক্রমিত হয় না।আর শরীরের ইমিউন সিস্টেম যে জীবাণুটি ধ্বংস করতে পারে না সেটিই সক্রিয় যক্ষ্মা। সংক্রমিত ব্যক্তির রাতে ঘাঁম, কাশি, ক্লান্তি, হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া, ফ্লু-এর মতো উপসর্গ, জ্বর প্রভৃতি নানা লক্ষণ দেখা দেয়। অন্য যে কোনো যক্ষ্মার চেয়ে ফুসফুসের সংক্রমণ অনেক বেশি বিপদজ্জনক।
যক্ষ্মা কী চুমুর মাধ্যমে ছড়ায়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীর সঙ্গী চুমুর মাধ্যমে আক্রান্ত হতে পারেন। কারণ থুতুতে প্রচুর পরিমাণ মাইক্রোব্যাকটেরিয়া থাকার কারণেই এই রোগে সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই যক্ষ্মা সংক্রমিত কোনো ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
যৌন সম্পর্কে মাধ্যমে যক্ষ্মা ছড়ায়?
এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বলেন, যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে আপনি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হতে পারেন। তবে এর সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে কারো যক্ষ্মা হয়েছে এমন তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে কোনো ব্যক্তির শরীরে জিনগতভাবে যক্ষ্মার জীবাণু থাকলে তা যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য জেনেটিক যক্ষ্মা অন্যের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। আসলে যাদের ইমিউন সিস্টেম অনেক দুর্বল কিংবা সুনির্দিষ্ট কিছু রোগ বিশেষ করে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং এইচআইভির মতো রোগ রয়েছে, তারাই যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন।
গবেষণা
জেনেটিক যক্ষ্মায় আক্রান্ত সঙ্গীদের কাছ থেকে এর জীবাণু অন্যের শরীরে প্রবেশ করলেই কেবল সেই ব্যক্তি আক্রান্ত হন এমন প্রমাণ গবেষণায়ও পাওয়া গেছে। এই তত্ত্ব পরীক্ষা করার জন্য, গবেষকরা পুরুষ-নারী দুজনের জিনগতভাবে পাওয়া ব্যাকটেররিয়ার তুলনা করেন। এ সময় গবেষকরা একটি অনন্য আণবিক কৌশল প্রয়োগ করেন। গবেষণায় তারা এটাই পান যে, যৌন সম্পর্কও জেনেটিক যক্ষ্মায় সংক্রমণের একটি সম্ভাব্য উপায় হতে পারে।
জেনেটিক যক্ষ্মার লক্ষণ
জেনেটিক যক্ষ্মার প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো- জেনিটাল এলাকায় আলসার এবং র্যা শ ওঠা। এ ছাড়া আপনার অস্বাভাবিক স্রাবও এর লক্ষণ হতে পারে। আপনি যদি এই উপসর্গগুলো খুঁজে পান, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
যক্ষ্মা নিরাময়ে করণীয়
চিকিৎসকরা বলেছেন, সাধারণত পালমোনারি যক্ষ্মা নিরাময়ে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ সময় লাগে। কেউ কেউ আবার পূর্ণ সুস্থ হতে ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ সময় নিতে পারেন। তবে ফুসফুসের যক্ষ্মাসহ অন্য সব ধরনের যক্ষ্মার চিকিত্সা করা কঠিন। এর মধ্যে জিনের যক্ষ্মাও অন্তর্ভুক্ত।যদি আপনি জেনেটিক যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন তাহলে আপনার চিকিৎসার মধ্য দিয়ে যাওয়া উচিত। কারণ এই রোগ পূর্ণ নিরাময় হয় না এবং তা আপনার সঙ্গীকেও আক্রান্ত করতে পারে। তাই এই রোগ থেকে নিরাময় পেতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রচলিত কিছু ধারণা
যক্ষ্মা নিয়ে প্রচলিত অনেক ধারণা আছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-এটি বংশগত রোগ, এটি একবারই হতে থাকে এবং যক্ষ্মা নিরাময় করা যায় না। এ ব্যাপারে চিকিৎসকরা বলেন, অন্তত ছয় মাসের জন্য যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা রাখা উচিত। প্রাথমিকভাবে সাবধানতা অবলম্বন করলে চিকিত্সা গ্রহণ শুরুর আগেই এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কমে যায়।